মোঃ মানিক মিয়া,বিশেষ করেসপন্ডেন্ট।গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) নিশাত অ্যাঞ্জেলা,সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শাহিনুর ইসলাম তালুকদার সহ তিনজনের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মামলা দায়ের করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ মনিরুজ্জামানের স্ত্রী।গত বুধবার ২২ শে অক্টোবর গাইবান্ধা জেলা আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।এজাহারে বলা হয়েছে গত ২৫ শে মার্চ পুলিশ সুপার নিশাত অ্যাঞ্জেলা এসআই মনিরুজ্জামানকে কার্যালয়ে ডেকে নেন।সেখানে মনিরুজ্জামানের এক আত্মীয় মোঃ তারিকুজ্জামান তুহিনের মৌখিক অভিযোগের কথা উল্লেখ করে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ আটক করেন এসপি। পরে ডিভাইসগুলো ফেরত না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মনিরুজ্জামানের স্ত্রী এবং সেটিকে বেআইনি কর্মকাণ্ড হিসেবে দাবি করেন।অভিযোগকারী তারিকুজ্জামান তুহিনের অভিযোগের সারসংক্ষেপ অনুযায়ী, তিনি অভিযোগ করেন যে ‘Bangla Khabor 1971’ নামক ফেসবুক পেজে তার ছবি ব্যবহার করে মিথ্যা পোস্ট করা হয়েছে।তুহিন জানান তিনি বা তার পরিবার কখনও আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, কোনো এক কুচক্রী ব্যক্তি ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য পরিকল্পিতভাবে ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে তার ছবি দিয়ে ব্যানার তৈরি করে ১৩ মার্চ ২০২৫ তারিখে ‘Bangla Khabor 1971’ ফেসবুক পেজে পোস্ট করে।এছাড়াও গত ৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখে তাকে ছাত্রলীগ ক্যাডার ও সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেওয়া হয়।অভিযোগে বলা হয় এসব পোস্ট তৈরি ও প্রচারে গাইবান্ধা সদর থানায় কর্মরত এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ মনিরুজ্জামানের সম্পৃক্ততা রয়েছে।তিনি তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ০১৮৮৯৬৮৬৫৭১ ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে উক্ত ফেসবুক আইডির লিংক ও ব্যানার পাটগ্রাম থানাসহ লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার মোবাইলে প্রেরণ করেন।এর উদ্দেশ্য ছিল,লালমনিরহাট জেলা পুলিশ যেন মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।তুহিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-১১৪৩) করেন।সেখানে উল্লেখ করা হয়, অভিযোগ অনুযায়ী ডিআইজি রংপুর রেঞ্জ মহোদয় ও এসপি গাইবান্ধার মৌখিক নির্দেশক্রমে এসআই মনিরুজ্জামানের ব্যবহৃত একটি Oppo A16 অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন (মডেল নং CPH2269, IMEI 1-864763055426470, IMEI 2-864763055426462) এবং একটি Lenovo Ideapad 330 ল্যাপটপ (মডেল নং PF9XB8723019,ডিভাইস আইডি-221841B8-0061-46C2-AAD2-BA2DFED49977) জব্দ করে বাংলাদেশ পুলিশ সিআইডি, মালিবাগ,ঢাকায় প্রেরণ করা হয় আইটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য। গাইবান্ধা জেলা পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই মনিরুজ্জামানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ পরীক্ষার জন্য জব্দ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তখন একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছিল।এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন “বিষয়টি পুরোপুরি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ ছিল।এতদিন পর এ মামলা দায়েরের বিষয়টি স্পষ্টতই হয়রানিমূলক এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে করা হয়েছে বলে মনে হয়"।এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার নিশাত অ্যাঞ্জেলা বলেন “এসআই মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছি। কাউকে হয়রানি করা হয়নি।”উল্লেখ্য এসআই মোঃ মনিরুজ্জামান বর্তমানে জয়পুরহাট জেলায় কর্মরত আছেন।গাইবান্ধায় দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনিক অভিযোগ ওঠেছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।পুলিশ কর্মকর্তাদের একাংশের মতে এই মামলা পুরনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে দায়ের করা হয়েছে।তারা আশা প্রকাশ করেন,তদন্তে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে।এ বিষয়ে এসআই মনিরুজ্জামানের মন্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।